বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ২২:০৯
শিয়াদের মহান সম্পদ ভারতে 

শিয়াদের মহান সম্পদ ভারতে 

নতুন প্রজন্ম মূল্যবান ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত

লখনৌ শহরেই এক সময়ে পঞ্চাশজন মুজতাহিদ একইসাথে জীবনযাপন করতেন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে নিযুক্ত প্রতিনিধি আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, আমাদের কাছে বিশাল সম্পদ, মহামূল্যবান ঐতিহ্য এবং অমূল্য জ্ঞানভাণ্ডার রয়েছে, কিন্তু নতুন প্রজন্ম এই সম্পদ সম্পর্কে অজ্ঞ, কিংবা তাদের সঙ্গে এই ঐতিহ্যের একটি ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন: এই লখনৌ শহরেই এক সময়ে পঞ্চাশজন মুজতাহিদ একইসাথে জীবনযাপন করতেন। ‘গুফরানমাব’ কবরস্থানে বিশজন রিসালার লেখক সমাহিত আছেন। এমনকি আল্লামা সাহেব-এ-জাওয়াহের তাঁর বিশ্ববিখ্যাত ফিকহি গ্রন্থ “জাওয়াহেরুল কালাম” লিখতে গিয়ে সেটি ভারতের আলেমদের কাছে পাঠিয়েছিলেন, এটা যাচাই করতে যে বইটি প্রকাশযোগ্য কিনা। এই “জাওয়াহের” হচ্ছে গোটা ইসলামী বিশ্বে সর্ববৃহৎ ফিকহি বিশ্বকোষ, শুধু শিয়া নয়, এমনকি সুন্নি আলেমদের কাছেও এটি অমূল্য। এ থেকেই বোঝা যায় যে, জ্ঞানচর্চায় ভারতের কী উচ্চ মর্যাদা ছিল।

তিনি আরও বলেন: লখনৌতে এমন একটি হোসেইনিয়া রয়েছে যাকে বলা হয় ‘ছোট হোসেইনিয়া’, যার আকার ইরানের ইমাম স্কোয়ারের সমান। এর মানে হচ্ছে, এখানে বিশাল সংখ্যক মানুষ সমবেত হতো। আজও লখনৌ এবং হায়দ্রাবাদের হাওজা-ইলমিয়া (ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) ঐ মহিমার সাক্ষ্য বহন করছে। এর স্থাপত্য, স্তম্ভ ও ছাদের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এসব কেন্দ্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও বিশাল ছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্য ও সম্পদের ব্যাপারে অজ্ঞাত।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন: ভারতে একসময় প্রশ্ন উঠেছিল, আশুরার রাতে ইমাম হোসেইন (আ)-এর তাঁবুতে পানি ছিল কিনা। কেবল এই একটি প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৫০টি বই লেখা হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে যে আলেমরা কতটা প্রস্তুত ও সক্ষম ছিলেন।

হিন্দুস্তান ছিল ইলমুল কালামের কেন্দ্র

হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন হাকিম ইলাহী বলেন: সবচেয়ে বড় শিয়া কালামি গ্রন্থ “আকাবাতুল আনওয়ার” ভারতে রচিত হয়েছিল। যদি নাজাফ ছিল ফিকহ ও উসুলের কেন্দ্র, তবে হিন্দুস্তান ছিল কালামবিদ্যার কেন্দ্র। এগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারা গর্ব অনুভব করে, নিজেদের শিয়া পরিচয়কে সম্মানের উৎস হিসেবে বিবেচনা করে।

তিনি আরও বলেন: আল্লামা আকা বুজুর্গ তেহরানি তাঁর “আয্-যরীআ” এবং সাইয়্যেদ মুহসিন আমিন তাঁর “আআইনুশ শিয়াহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে শিয়াদের কত বিশাল সম্পদ রয়েছে। কিন্তু শুধু ভারতের জন্যও যে বিপুল আলেম ও জ্ঞানচর্চার ভাণ্ডার ছিল, সেটি পরিচিত করানো আমাদের দায়িত্ব।

সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হারাম

ভারতে শিয়াদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ভারতে শিয়ারা সমাজের জন্য কী কী সেবা প্রদান করেছে, সেটি তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে যে শিয়া জনগোষ্ঠী দেশের জন্য কল্যাণকর। শিয়ারা সর্বদা যুক্তি, প্রজ্ঞা ও ফিকহি ভিত্তিতে কাজ করে এবং সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন: আমাদের ফিকহ অনুযায়ী, সামাজিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হারাম— তা ইসলামী সমাজ হোক বা অ-ইসলামী সমাজ। সব মারাজে এই বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছেন। তাই এই সত্য তুলে ধরা জরুরি যে, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা একটি হারাম কাজ।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha